বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৫৯:০১ দুপুর
প্রতিদিনের মতো আজও একই সময়ে ঘুম থেকে উঠল।
বিছানায় শুয়েই চিন্তা করল আজকের প্ল্যান কি কি।
ভোর রাতে একটু শীত করাতে বিছানার চাদরটাই শরীরে জড়িয়ে নিয়েছিল। রুমমেট ফজরের আজান দিতেই মসজিদে চলে গেছে।
রুমে সে একা।
একটু একটু শীত এখনো করছে। উঠে রেডিওটা ছাড়ল। যদিও একটা টিভি রয়েছে। তারপরও প্রতিদিন রেডিওতে সকাল সাতটার নিউজ শোনাটা এখন নেশার মতো হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত ডায়েরি নামে একটি ৫ মিনিটের অনুষ্ঠান প্রতিদিন শুনছে। এটা শুরু হলেই কীভাবে যেন ঘুম ভাঙ্গে।
একটা অ্যালার্ম ঘড়ির কাজ করে এখন রেডিওর এই অনুষ্ঠানটি।
অফিসে এসে সে অনুভব করল আজ পহেলা ফাল্গুন!
মেয়েরা বাসন্তি রং এর শাড়ি পড়ে এসেছে। কলিগদেরও ফাগুনের আগুন রাঙা পোষাক! আর সে কিনা এসেছে মান্ধাতার সেই চিরাচরিত ফুল হাতা পোলো শার্ট পরে?
মনের ভিতর একটু অভিমানের জমাট কুয়াশা অনুভব করল।
বউটা একবার ফোনও তো করতে পারত!
কেন করল না?
তবে কি পিকনিকের দিনের সেই ঘটনাটা এখনো সে মনে রেখেছে?
মোবাইলটা হাতে নিয়ে একবার মনে করল ফোন করে। পরক্ষণেই সেটা বাতিল করে দিল। দৃঢ় চোয়ালে হৃদয়ের রুক্ষতা প্রকাশ পেল।
থাকুক সে একা... তার মত।
এগারটা পর্যন্ত একটানা কাজের ভিতরে ডুবে থাকলো।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা অস্থিরতা কাজ করেই যাচ্ছিল। দুবার জেনারেল ম্যানেজারের রুমে ডাক পড়ল। জটিল কিছু ইস্যুতে নতুন করে নোট দিলেন। সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশ পেয়ে আবার নিজের কেবিনে। কাগজগুলো টেবিলে সব এলোমেলো।
ঠিক ওর মনটার মতই।
বার বার মোবাইলের কীগুলো একটি বিশেষ নাম্বারে প্রেস করার জন্য মনটা নিশপিশ করছে। কিন্তু ঐ যে কাঠখোট্টা মনের একাংশ জমাট বেঁধে রয়েছে!
অভিমানী মন!!
সে ই যত নষ্টের গোড়া...
সিকিউরিটি ফোন করল।
'স্যার, আপনার একজন গেষ্ট আসছে। '
' কোথায় এখন?'
' গেষ্ট রুমে...'
'আচ্ছা আমি আসছি।'
কে হতে পারে? কোনো সাপ্লাইয়ার? আজকাল অপরিচিত বিভিন্ন নতুন সাপ্লাইয়ার এসে প্রায়ই বিরক্ত করছে। সেরকমই কেউ হবে হয়ত।
তবে গেষ্ট রুমে যেয়ে যাকে দেখল...
এতোটা আশা করেনি সে। হৃদয়ে একটা মিশ্র অনুভুতি খেলা করে গেলো। আনন্দ চেপে ভ্রু কুঁচকে বলল,
'তুমি?'
'হ্যা, আমি... কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?'
বাসন্তি রঙের শাড়ি পরা বউকে কেমন স্বপ্নের রাজকন্যার মত লাগছে! ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,
'কি হলো? হা করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? এই নাও... তোমার ফতুয়া। পড়ে ফেল... আর ছুটি নিয়ে নাও। আমি রিক্সা নিয়ে এসেছি...'
'এতো দূর থেকে রিক্সায় করে এসেছ!?
'ওমা, ইঞ্জনচালিত রিক্সা। এক ঘন্টা লেগেছে...'
১০ মিনিট পর...
হাইওয়ে দিয়ে রিক্সায় করে সে এবং তার বউ ফাল্গুনের প্রথম দিনে সোনাঝরা রোদ্দুর মেখে নিয়ে চলছে। বাতাসে বউ এর চুলগুলো উড়ে এসে ওর মুখে লাগছে! অন্য সময় হলে তার বিরক্ত লাগত। আজ লাগছে না। বউ এর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
'আমার উপর রাগ আছে এখনো?'
'জানি না...'
অন্য সময় এই কথার পরে বউ হাত সরিয়ে নিতো। কিন্তু আজ কেন জানি হাতটা আরো শক্ত করে ধরে রাখল... পরম নির্ভরতায়... সকল ভাললাগা আর আবেগে মাখামাখি হয়ে বউ এর হৃদয়টাই যেন ওকে ধরে রেখেছে। ফাগুনের প্রথম দিনে বসন্ত ছুঁয়ে গেলো চকিতে...
বিষয়: সাহিত্য
৯৯৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন